হোম / বাংলাদেশ / অপরাধ ও আইন / গুমের ঘটনায় বিদেশি সম্পৃক্ততা ও বাহিনীর ভেতরের দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত কমিশনের: ভারতের নামও উঠে এলো
enforced-disappearance-report-reveals-indian-western-links

গুমের ঘটনায় বিদেশি সম্পৃক্ততা ও বাহিনীর ভেতরের দ্বন্দ্বের ইঙ্গিত কমিশনের: ভারতের নামও উঠে এলো

দ্য কন্টিনেন্টাল হেরাল্ড ডেস্ক রিপোর্ট | ২৩ জুন ২০২৫

গুম ও বেআইনি নিখোঁজ সংক্রান্ত ঘটনার পেছনে শুধু দেশীয় নিরাপত্তা বাহিনী নয়, বরং বাহিনীর ভেতরকার মতানৈক্য এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের জটিল সম্পর্কও কার্যকর ছিল—এমনটাই উঠে এসেছে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত তদন্ত কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে।

 

প্রতিবেদনে জানানো হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর একটি অংশ গুম ও অন্যান্য বেআইনি কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করেছিল, ফলে তারা চাকরি ও ব্যক্তিগত জীবনে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি কেউ কেউ তাদের অবস্থান জানানোয় পদোন্নতি না পেয়ে নজরদারির শিকারও হন।

 

কমিশনের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, গুম ছিল না বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বরং একটি কাঠামোগত অপারেশন—যেখানে সন্ত্রাসবিরোধী সহযোগিতার নামে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোর নীরব সমর্থন ছিল। ভারতকেও এখানে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

 

এক যুবকের ভাষ্যমতে, তার ভাইকে একটি গোয়েন্দা সংস্থায় রাজনৈতিক বিরোধীদের তালিকা তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে তালিকাভুক্ত অনেককে হত্যা করা হয়, যা তার ভাই মানসিকভাবে নিতে না পেরে হাসপাতালে ভর্তি হন।

 

এক সাবেক সৈনিক জানান, তাকে একটি গোপন বন্দিশিবিরে পাঠানো হয়েছিল, যেখানে বন্দিদের ওপর চরম নিষ্ঠুরতা চালানো হতো। বন্দিদের সঙ্গে স্বাভাবিক কথা বলাও নিষিদ্ধ ছিল, বরং ইশারা বা শিস দিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হতো। তবে তিনিই পরে গোপনে বন্দিদের মধ্যে নিজের খাবার ভাগ করে দিতেন, যা এক ভুক্তভোগী নিশ্চিত করেছেন।

 

র‌্যাবের এক কর্মকর্তা জানান, তাকে একজন দীর্ঘদিনের বন্দিকে হত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি তা অমান্য করেন এবং দায়িত্বে থেকে যান। র‌্যাবের আরও দুই সদস্য লিখিত চিঠিতে জানান, তারা বেআইনি আদেশ পালন করবেন না।

 

প্রতিবেদনে উল্লেখ, এ ধরনের কিছু চিঠি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়েও পাঠানো হয়েছিল, যা পরবর্তীতে গণভবন থেকে উদ্ধার করা হয়। তথাপি গুম অব্যাহত ছিল, অনেক ক্ষেত্রে মৃতদেহ ট্রেনলাইনে ফেলে বা চলন্ত গাড়ির নিচে রেখে গুম করা হতো।

 

সবচেয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য হচ্ছে, এক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন—তাকে ডিবি হেফাজতে দুজন মার্কিন নাগরিক জেরা করেন। যদিও তারা সরাসরি নির্যাতনে অংশ নেননি, তবে তাদের উপস্থিতিই সেই বেআইনি কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দেয় বলে অভিযোগ।

 

কমিশন বলেছে, এই অপরাধগুলো অঘোষিতভাবে অনুমোদিত ছিল এবং দায়ী ব্যক্তিদের প্রকৃত অপরাধী হিসেবে বিবেচনা করা হয়নি। এর ফলে দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে, তা ভবিষ্যতের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়।

Share
Scroll to Top