নিজস্ব প্রতিবেদক, The Continental Herald
প্রকাশিত: ২ আগস্ট ২০২৫, ১০:০১ PM
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্রতা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে, রোববার ভোরে রাশিয়ার মিসাইল হামলায় কিয়েফ শহর কেঁপে উঠেছে। ইউক্রেনের রাজধানীর সামরিক প্রশাসন টেলিগ্রামে এই হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এই হামলার কয়েক দিন আগেই রাশিয়া কিয়েফে বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছিল, যাতে অন্তত ৩১ জন নিহত হয়েছেন।
কিয়েফে রাশিয়ার নতুন হামলা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাত ১২টার পরই কিয়েফে শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। রাশিয়ার এই হামলার বিস্তারিত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এখনও জানা যায়নি। তবে গত সপ্তাহে রাশিয়ার হামলায় কিয়েফে ব্যাপক প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞের পর এবারও বেসামরিক এলাকা লক্ষ্য করে আঘাত হানার অভিযোগ উঠেছে।
ইউক্রেনের জবাবি হামলা
ইউক্রেনের এসবিইউ নিরাপত্তা বাহিনী শনিবার জানিয়েছে, তারা রাশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বিমান ঘাঁটি ও গ্যাস পাইপলাইনে ড্রোন হামলা চালিয়েছে। প্রিমোর্স্কো-আখতারস্ক শহরে অবস্থিত এই ঘাঁটিতে ইরানি তৈরি শাহেদ ড্রোন মজুদ ছিল, যা রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার জন্য ব্যবহার করে। এছাড়াও পেনজা অঞ্চলে একটি সামরিক শিল্প প্রতিষ্ঠানেও হামলা চালানো হয়েছে।
রাশিয়ার বক্তব্য ও ক্ষয়ক্ষতি
- রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবি করেছে, তারা ইউক্রেনের ১১২টি ড্রোন ধ্বংস করেছে। তবে স্থানীয় গভর্নররা নিহত ও আহত হওয়ার খবর দিয়েছেন:
- সামারা অঞ্চলে ড্রোনের ধ্বংসাবশেষে একটি বাড়িতে আগুন লাগায় এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন।
- রোস্তভ অঞ্চলে একটি শিল্প স্থাপনায় হামলায় এক নিরাপত্তা কর্মী মারা গেছেন।
- সোচিতে তেল ডিপোতে ড্রোন হামলায় ব্যাপক আগুন ছড়িয়ে পড়েছে, যা নিয়ন্ত্রণে শতাধিক ফায়ারফাইটার কাজ করছেন।
দ্বিপাক্ষিক অভিযোগ ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেন দাবি করছে, তাদের হামলা শুধুমাত্র রাশিয়ার সামরিক অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে। অন্যদিকে, রাশিয়া ইউক্রেনের বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও বেসামরিক স্থাপনায় হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এদিকে, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কেনা বন্ধ করবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞার মুখে ভারতীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা রাশিয়ার তেল কেনা চালিয়ে যাবেন।
ইউক্রেনে দুর্নীতি মামলা ও জেলেনস্কির অবস্থান
ইউক্রেনের দুর্নীতি দমন সংস্থা (NABU) শনিবার জানিয়েছে, তারা প্রতিরক্ষা খাতে একটি বড় দুর্নীতি চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করেছে। এতে সংসদ সদস্য, স্থানীয় প্রশাসক ও প্রতিরক্ষা কোম্পানির কর্মকর্তারা জড়িত ছিলেন। প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দুর্নীতি দমনে সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রে অগ্নিকাণ্ড
রাশিয়া-নিয়ন্ত্রিত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রের কাছে ইউক্রেনের গোলাবর্ষণে আগুন লাগলেও তা নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। পারমাণবিক দুর্ঘটনা এড়াতে উভয় পক্ষই সতর্কতা জারি রেখেছে।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান এখনও অনিশ্চিত। বিশ্বজুড়ে এই যুদ্ধের প্রভাব ও উত্তেজনা ক্রমশ বাড়ছে।
© The Continental Herald 2025 | সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত