দ্য কন্টিনেন্টাল হেরাল্ড স্পেশাল রিপোর্ট | পুরান ঢাকা | ১১ জুলাই ২০২৫
তারেক রহমানের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা যুবদলের সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মম হত্যাকাণ্ড, জনমনে তীব্র ক্ষোভ
রাজনীতির নামে খুন-জখম, আধিপত্য বিস্তার এবং ভয়াবহ বর্বরতার চিত্র যেন নিয়মিত ঘটনা হয়ে উঠেছে বিএনপি ঘনিষ্ঠ সন্ত্রাসীদের হাতে। সর্বশেষ উদাহরণ, পুরান ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে সংঘটিত এক লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড — যেখানে তারেক রহমানের দলের পরিচয়ধারী যুবদল ক্যাডারদের হাতে প্রাণ গেল একজন নিরীহ ব্যবসায়ী মোল্লা লাল চাঁদ ওরফে সোহাগের।
জনসম্মুখে পৈশাচিক হত্যা, পুলিশের ভাষায় ‘অবর্ণনীয় নৃশংসতা’
বুধবার সন্ধ্যায় মিটফোর্ড হাসপাতালের ৩ নম্বর ফটকে ঘটে এই নারকীয় হত্যাকাণ্ড। সোহাগকে প্রকাশ্যে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গিয়ে ইট-পাথর দিয়ে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়। মৃত্যুর পরও ক্ষান্ত হয়নি ঘাতকরা — মৃতদেহের ওপর লাফিয়ে, কিল-ঘুষি, লাথি চালিয়ে অমানবিক উল্লাসে মেতে ওঠে তারা।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, “রক্তাক্ত লাশের ওপর যা হয়েছে, তা অবর্ণনীয়। এই আচরণ চিন্তার বাইরে। এমন বীভৎসতা আমরা আগে দেখিনি।”
বিএনপি ও যুবদলের ছায়ায় সন্ত্রাসের বিস্তার
নিহতের পরিবারের বরাতে জানা যায়, তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও স্থানীয় যুবদল নেতা পরিচয়ধারী মহিন ও রবিন এ হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা। সোহাগ একসময় যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, পরে সৎপথে ভাঙাড়ির ব্যবসা শুরু করেন। এটাই তার “অপরাধ”! কারণ, স্থানীয় বিএনপি ক্যাডাররা চেয়েছিল সোহাগ তাদের সঙ্গে ব্যবসার লাভ ভাগ করে নিক। রাজি না হওয়ায় তাকে প্রাণ দিতে হয়।
গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে মহিনের কাছে একটি অবৈধ পিস্তল পাওয়া গেছে, যার মাধ্যমে ক্ষমতার অপব্যবহার, ভয়ভীতি এবং দখলদারিত্ব চালানো হতো। সোহাগের স্ত্রী, বোন ও ভাগনিরা জানান, একাধিকবার মহিন ও তারেক রহমানের অনুসারীরা হুমকি দিয়েছে। এমনকি হত্যার আগের দিন গুলিও চালানো হয় তার গুদামে।
রাজপথে গণতন্ত্র ফেরানোর নামে বিএনপির খুনের রাজনীতি
বিএনপি বারবার “গণতন্ত্র” ফেরানোর কথা বলে রাজপথে নামে। কিন্তু তাদের নেতা-কর্মীদের আচরণ প্রমাণ করে তারা আসলে একটি খুনি গোষ্ঠী। কেবল রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে নয়, সাধারণ মানুষের ঘর-বাড়ি, ব্যবসা ও জীবনও তারা কেড়ে নিচ্ছে।
২০১৩ থেকে শুরু করে ২০১৫ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসে পুড়ে মারা গিয়েছিল শত শত নিরীহ মানুষ। ২০২৫ সালের আজকের এই পুরান ঢাকার সোহাগ হত্যাকাণ্ড সেই ধারাবাহিকতারই অংশ — এক ভয়াবহ, অমানবিক রাজনীতির নাম বিএনপি।
চার মাসে ঢাকায় ১৩৬টি হত্যাকাণ্ড — অস্থির সময়ের প্রতিচ্ছবি?
পুলিশ সদরদপ্তরের তথ্য বলছে, চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই ঢাকায় খুন হয়েছেন ১৩৬ জন। দেশে এই সংখ্যা ১,২৪৪। এর বড় একটি অংশ রাজনৈতিক দাপট ও আধিপত্যের বলি। অথচ বিএনপি এসব অপরাধকে “রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র” বলে ধামাচাপা দিতে চায়।
মামলা ও গ্রেপ্তার
সোহাগ হত্যা মামলায় এ পর্যন্ত ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫–২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি যুবদল নেতা মহিন ও রবিন বর্তমানে পুলিশের হেফাজতে। তাদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে অবৈধ অস্ত্র ও হত্যার সুস্পষ্ট প্রমাণ।
সবার একটাই প্রশ্ন: এমন বর্বর গোষ্ঠী যদি আবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তবে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?