হোম / আন্তর্জাতিক / সিরিয়ার নতুন জাতীয় প্রতীক উন্মোচন: ‘আসাদ-পরবর্তী যুগের সূচনা’ ঘোষণা
syria-new-national-emblem-post-assad-era

সিরিয়ার নতুন জাতীয় প্রতীক উন্মোচন: ‘আসাদ-পরবর্তী যুগের সূচনা’ ঘোষণা

দ্য কন্টিনেন্টাল হেরাল্ড স্পেশাল ডেস্ক রিপোর্ট | ৪ জুলাই ২০২৫

 

দীর্ঘ ৬২ বছরের একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে সিরিয়া এক নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে। এই ঐতিহাসিক মোড় ঘোড়ার সাক্ষী হলো দেশটির জাতীয় প্রতীক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে। বৃহস্পতিবার রাজধানী দামাস্কাসের প্রেসিডেন্সিয়াল প্যালেসে আয়োজিত এক জমকালো অনুষ্ঠানে সিরিয়ার নতুন জাতীয় প্রতীক উন্মোচন করা হয়। একইসঙ্গে দেশব্যাপী বিভিন্ন শহরের কেন্দ্রীয় স্কয়ারে আয়োজন করা হয় উৎসবমুখর জনসমাগম ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

 

সোনালি ঈগল প্রতীক: শক্তি ও নবযাত্রার প্রতীক

নতুন জাতীয় প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে সোনালি ঈগল, যা পূর্ববর্তী বাজপাখির স্থলাভিষিক্ত হলো। এই ঈগলের মাথায় রয়েছে তিনটি তারা—যা জনগণের মুক্তির প্রতীক বলে ঘোষণা দিয়েছেন দেশটির তথ্যমন্ত্রী। ঈগলের পাঁচটি লেজের পালক নির্দেশ করে সিরিয়ার পাঁচটি ভৌগোলিক অঞ্চল: উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম ও কেন্দ্র। আর এর ডানার ১৪টি পালক প্রতিফলিত করে সিরিয়ার ১৪টি প্রদেশ—যাদের প্রতিটির পেছনে রয়েছে বিপ্লবের ১৪ বছরের সংগ্রামের গল্প।

 

‘দামাস্কাসের গল্প নতুনভাবে শুরু হলো’

নবগঠিত প্রশাসনের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা তাঁর বক্তব্যে বলেন, “আমরা আজ যে পরিচয় দিচ্ছি তা একটি অবিভাজ্য, ঐক্যবদ্ধ সিরিয়ার প্রতিচ্ছবি।” তিনি আরও বলেন, “এই প্রতীক এক নতুন ইতিহাসের সূচনা করে, যা আমাদের শক্তি, উদ্ভাবন ও দৃঢ় সংকল্পকে তুলে ধরে। দামাস্কাসের গল্প এখানেই থেমে থাকেনি। বরং, এখান থেকেই ইতিহাস আবার নতুন করে শুরু হবে।”

 

আল-শারা তাঁর বক্তব্যে পূর্বতন শাসনব্যবস্থাকে তীব্রভাবে সমালোচনা করে বলেন, “আমরা একটি অপমানজনক অধ্যায় পেছনে ফেলে এসেছি। আমাদের রক্ত বৃথা যায়নি। কারাগার আজ উন্মুক্ত, নির্বাসনের পথ আজ বন্ধ। আমাদের ধৈর্য আজ বিজয়ের আলোয় উদ্ভাসিত।”

 

নতুন পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট আসছে

নতুন প্রতীক চালুর সাথে সাথেই জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট এবং সরকারি সকল দলিলাদিতে এই প্রতীক সংযুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তর। ফলে দেশবাসীকে আসন্ন মাসগুলোতে নতুন ডিজাইনের পরিচয়পত্রের জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

 

‘একটি নিপীড়িত যুগের সাংস্কৃতিক মৃত্যু ঘটলো’

দেশটির নবনিযুক্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদ আল-শাইবানি বলেন, “আমরা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি নতুন সিরিয়ার মুখ তুলে ধরেছি। প্রতিবার বিশ্বনেতাদের সাথে বৈঠকে আমরা একটি স্বাধীন, আত্মবিশ্বাসী জাতির গল্প বলেছি।” তিনি আরও যোগ করেন, “এটি নিছক একটি প্রতীক নয়, এটি সেই যুগের সাংস্কৃতিক মৃত্যু, যে যুগ আমাদের পরিচয়কে ‘শ্লোগান ও ভয়ের মুখোশে’ আটকে রেখেছিল।”

 

সারা দেশে আনন্দঘন উৎসব

দামাস্কাসের উমাইয়াদ স্কয়ার, অজানা শহীদের সমাধি এবং আন্তর্জাতিক মেলা প্রাঙ্গণসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে উদযাপন হয় বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। লাটাকিয়া, আলেপ্পো, ইদলিব, দেইর ইজ-জোর, হামাসহ সিরিয়ার প্রায় সব প্রদেশেই নাগরিকদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে উৎসবের রূপ নেয় নতুন প্রতীকের অভিষেক। স্থানীয় মোবাইল অপারেটরদের পক্ষ থেকে জনগণকে পাঠানো হয় বিশেষ বার্তা:
“স্বাধীনতার আকাশে দৃঢ় সংকল্পের নবজাগরণ – সিরিয়ার নতুন জাতীয় প্রতীক।”

 

ইতিহাসের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বর মাসে দীর্ঘদিনের শাসক বাসার আল-আসাদ রাশিয়ায় পালিয়ে গেলে ১৯৬৩ সাল থেকে চলমান বাথ পার্টির একদলীয় শাসনের অবসান ঘটে। এরপর জানুয়ারিতে আহমেদ আল-শারার নেতৃত্বে গঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন। আজকের দিনটি সেই নতুন পথচলার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক—যেখানে ইতিহাস বলবে:
“সিরিয়া ফিরে পেয়েছে তার আত্মপরিচয়, মর্যাদা এবং আশা।”

Share
Scroll to Top